হজ গুনাহমুক্ত হওয়ার ইবাদত

হজ পালনের মাধ্যমে মুমিনরা গুনাহ থেকে মাফ পান। পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করেন। আল্লাহর মেহমান হওয়ার মর্যাদা লাভ করেন হজ পালনকারীরা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণনা করে বলা হয়েছে- ‘যে হজ করল এবং কোনোরকম অশ্রাব্য আচরণ কিংবা অনাচার থেকে মুক্ত থাকল, সে হজ থেকে সদ্যপ্রসূত নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে ফিরে এলো’ (বুখারি)। উপরোক্ত হাদিসে যে স্পষ্টভাবে আভাস দেওয়া হয়েছে যারা আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী সঠিকভাবে হজ পালন করবে তারা অতীতের সব গুনাহ থেকে মাফ পাবেন এবং সদ্যপ্রসূত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে তারা হজ থেকে ফিরে আসবেন। আল্লাহর কাছে হজের মর্যাদা অসীম। জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে আল্লাহ এ কারণেই মহিমান্বিত দিন হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন। হজ তথা জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিশেষ মর্যাদার কারণেই মহানবী (সা.) এই ১০ দিনে রোজা রাখা এবং বেশি বেশি ইবাদত করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। মহান আল্লাহ স্বয়ং পবিত্র কোরআনে এ ১০ দিনের রাতের কসম করেছেন। হাদিস গ্রন্থসমূহে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনকে সর্বোত্তম দিন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

যিনি বা যারা হজ করেন তারা যে কতটা সৌভাগ্যবান তার প্রমাণ পাওয়া যায় রসুল (সা.)-এর হাদিসে। তিনি সাহাবাদের বলেছেন- তুমি যখন কোনো হাজির দেখা পাবে তখন তাকে সালাম দেবে, মুসাফাহা করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে তিনি যেন তোমার জন্য আল্লাহর ঘরে প্রবেশের আগে তার কাছে মাফ চান। কারণ হাজি হলো গুনাহ থেকে পবিত্র ব্যক্তি (মুসনাদে আহমদ)।হজ নিছক কাবাঘর সফর করা নয়, এটি হলো নিজেকে আত্মিক ও বাহ্যিক সংশোধনের সুযোগ। যিনি হজ পালনের সময় অতীতের সব ভুলত্রুটি থেকে দূরে থাকার ওয়াদা করবেন, বাদবাকি জীবন শুদ্ধভাবে চলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবেন তার হজই আল্লাহ কবুল করবেন এবং একমাত্র তার পক্ষে সদ্যপ্রসূত নিষ্পাপ শিশুর মতো কাবাঘর জিয়ারত শেষে ফিরে আসা সম্ভব হবে। হজের সফরে হাজিদের দুনিয়াদারির সংকীর্ণতা ও হীনমন্যতা থেকে দূরে থাকতে হবে। সদাচরণ ও শুদ্ধাচারে নিজেদের মগ্ন রাখতে হবে। সম্ভাব্য সর্বক্ষণ আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরি দশম সনে শেষ হজ পালন করেন। সুরা ‘আন নাসার’ নাজিল হওয়ার পর রসুলে পাক (সা.)-এর উপলব্ধি হয় আল্লাহর সান্নিধ্য পাওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে। তিনি উম্মতদের সঙ্গে হজ পালনের ঘোষণা দেন। অনুসারীদের সবাই যাতে হজ পালনে হাজির হন সেজন্য তার ইচ্ছার কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। তিনি হজরত আলী (রা.)-কে ইয়েমেন থেকে ডেকে আনেন। ধারে-কাছের সব জনপদে তার হজ পালনের এবং তাতে উম্মতদের অংশগ্রহণের তাগিদ দেন।

দশম হিজরির ২৫ জিলকদ মদিনায় মসজিদে নববির জুমার জামাতের পরদিন মহানবী (সা.) মক্কার উদ্দেশে হজ কাফেলার যাত্রা শুরুর ঘোষণা দেন। পরদিন ২৬ জিলকদ তিনি জোহরের নামাজ আদায়ের পর মক্কার উদ্দেশে মদিনা থেকে রওনা দেন। হাজার হাজার মুমিন রসুল (সা.)-এর সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন। বিশাল হজ কাফেলা মদিনা থেকে ৬ মাইল দূরবর্তী ‘জুল জোলাইফা’ নামক স্থানে অবস্থান নেয়। সেখানে অবস্থানের পরদিন মহানবী (সা.) এহরাম বাঁধেন। তার পর ‘লাব্বাইক’ ধ্বনি তুলে যাত্রা শুরু করেন। ৯ দিন ধরে হজ কাফেলা মক্কার দিকে এগিয়ে যায়।

জিলহজ মাসের ৪ তারিখে রসুলে পাক (সা.) মক্কায় এসে উপনীত হন। হাশেমি বংশের শিশুরা মহানবী (সা.)-কে সাদর সম্ভাষণ জানায়। তিনি তাদের আদর করেন। শিশুদের কাউকে তার উটের সামনে বা কাউকে পেছনে বসিয়ে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। এভাবে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর পবিত্র কাবাগৃহের সন্নিকটে পৌঁছান আল্লাহর নবী (সা.)। তিনি কাবার পানে চেয়ে সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন- হে আল্লাহ তুমি কাবার মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দাও। রসুলে পাক (সা.) কাবা শরিফ তওয়াফের মাধ্যমে তাঁর হজ মিশন শুরু করেন। তার পর মাকামে ইব্রাহিমে হাজির হয়ে মহান আল্লাহর উদ্দেশে শুকরানা নামাজ আদায় করেন। পবিত্র কাবা জিয়ারতের পর রসুলে পাক (সা.) সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে যান। ৮ জিলহজ তিনি মিনাতে অবস্থান করেন। ৯ জিলহজ সেখান থেকে ফজরের নামাজ আদায় শেষে রওনা হন। দলবলসহ দুপুরে আরাফাতের ময়দানে পৌঁছেন আল্লাহর নবী। তিনি একটি উটের ওপর আরোহণ করে উম্মতদের জন্য তাঁর শেষ হজের মূল্যবান উপদেশ রাখেন। রসুলে পাক (সা.)-এর খুতবা শেষে তার ওপর নাজিল হয় কোরআনের সেই ঐতিহাসিক আয়াত- ‘আজ তোমাদের জন্য আমি তোমাদের দীনকে পূরণ করে দিলাম। তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পূরণ করে দিলাম এবং দীন ইসলামের ওপর আমার সন্তুষ্টির সিলমোহর দিয়ে দিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *