ডানা দুটো নীল রং, বাকিটা কালো।
শুনে মনে হতে পারে কোনো পাখির কথা বলছি। পাখি তো বটেই। নাম আকাশতরি। যান্ত্রিক এই ‘পাখি’ তৈরি করেছেন ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) একদল শিক্ষার্থী। এই বিমান নিয়ে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকসের (এআইএএ) নকশা, নির্মাণ ও উড্ডয়ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা। বিমানটির অভিনব ডিজাইন বিচারকদের মন জয় করে নিয়েছে। ফলস্বরূপ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় এবং এশিয়ার মধ্যে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা।
আমেরিকার কানসাস রাজ্যের উইচিটা শহরে বার্ষিক নকশা, নির্মাণ, উড্ডয়ন (ডিজাইন, বিল্ড, ফ্লাই—ডিবিএফ) প্রতিযোগিতার ২৮তম আসর হয়ে গেল ১৮-২১ এপ্রিল। প্রতিযোগিতায় বিমানের নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ কিংবা ওড়ার সক্ষমতাও মূল্যায়ন করা হয়। বিশ্বের ১৩টি দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি রাজ্য থেকে মোট ১১০টি দল এতে অংশ নিয়েছিল। সবগুলো দলের মধ্যে ৭১তম এবং দক্ষিণ এশিয়া ও এশিয়ায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জন করে এমআইএসটির শিক্ষার্থীদের দল ‘নভোনীল’। দলের সবাই বিমান প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী—নাভিদ ইবনে নেওয়াজ চৌধুরী, নাফিজ রেদোয়ান, শাহ ইশরাক, মাশরুর নাফিম, মাশহুনুর রহমান, কাজি তাউহিদ হোসেন ও স্বপ্নীল এন্দ।
প্রতিযোগিতায় তিনটি ধাপ ছিল—প্রযুক্তিগত পরিদর্শন (টেকনিক্যাল ইন্সপেকশন), স্থল অভিযান (গ্রাউন্ড মিশন) ও উড্ডয়ন। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি), ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লড়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের অন্যতম সদস্য নাভিদ ইবনে নেওয়াজ চৌধুরী বলেন, ‘জার্নিটা বেশ ভালো ছিল। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিমান ও মহাকাশ সেক্টরে তাদের শিক্ষার্থীদের কীভাবে গড়ে তুলছে, সেটা দেখতে পেরেছি। নতুন অনেক কিছুই শিখেছি; বাস্তবে একটা বিমান কীভাবে ডিজাইন করা হয়, বানানো হয়। বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয়েছে, নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।’‘নেটওয়ার্কিং’ যে প্রতিযোগিতার সময় বেশ কাজে দেয়, সেই গল্পও শোনালেন নাভিদ ইবনে নেওয়াজ চৌধুরী। ‘১৭ এপ্রিল উইচিটা বিমানবন্দরে নামার পরই দেখা হয় ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের দলের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। অভিজ্ঞতা ও কাজ সম্পর্কে জানলাম। মজার বিষয় হলো, প্রতিযোগিতার সময় এই দলটাই আমাদের ট্রান্সমিটার দিয়ে সাহায্য করেছিল।’স্বল্প খরচে ব্যতিক্রমী মডেলের বিমান বানাতে পেরে দলের প্রত্যেকেই খুশি। তবে তহবিল সংগ্রহ নিয়ে যে বেগ পেতে হয়েছে, সেই কথাও যোগ করলেন, ‘আমাদের আসলে ফান্ডিংটা খুব দরকার। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভালো পরিমাণ অর্থ পেলে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব।’
ভালো কিছু করার জন্য তারুণ্যের এ দলটি যে মুখিয়ে আছে, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। প্রতিযোগিতা শেষে বিমানের ডানায় কেউ লিখেছেন, ‘নেভার লুজ হোপ’ (আশা হারিয়ো না), ‘নেভার গিভ আপ’ (হাল ছেড়ো না)। আশার বাণী শুনিয়ে কেউ লিখেছেন, ‘মিরাকল হ্যাপেনস’ (অলৌকিক কিছুও ঘটে)। সামনের দিনে এই ‘মিরাকল’ই ঘটাতে চান মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এই শিক্ষার্থীরা। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করতে চান তাঁরা।