রানা মাহমুদ ॥ যশোর নবকিশলয় প্রিক্যাডেট স্কুলের মেইন গেইটে রোববার সকালে দেখা যায় অভিভাবকদের জটলা। কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, আবার কেউ তার সন্তান পৌঁছে দিচ্ছেন স্কুলে। সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছেন পানি ও শরবত। রোদের মধ্যে বাইরে যেনো না বের হয় সে পরামর্শ দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
তবে অধিকাংশ অভিভাবকেরই চোখে-মুখে ছিলো উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। অনেক অভিভাবক স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুল গেটে অপেক্ষা করেন তাদের সন্তানদের জন্য। কাঠফাটা রোদ ও তাপপ্রবাহের কারণে আবার অনেকেই সন্তানদের স্কুলে আনেননি বলে জানান অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা জানান, এমন পরিস্থিতিতে তারা আর কখনও পড়েননি। তীব্র গরমে বাধ্য হয়ে তারা সন্তানদের স্কুলে আনতে বাধ্য হয়েছেন। আবার অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের স্কুলে আনা থেকে বিরত থাকেন।
শুধু নবকিশলয় স্কুল নয়, শহর ও শহরতলীর প্রতিটি বিদ্যালয়ের সামনেই সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অভিভাবকদের। কারণ শিশুরা কখন অসুস্থ হয়ে পড়বে এমন শঙ্কা ছিলো তাদের মধ্যে।
শহরের জিলা স্কুলের গেটের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন নুসরাত জাহান নামে এক অভিভাবক। তার তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া একমাত্র সন্তানের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা। তিনি বলেন, শিক্ষকদের কাছে খোঁজ নিয়েছি ভেতরে শিক্ষার্থীরা হইচই করলেও গরমে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের অস্থিরতা।
একই কথা বলেন ফাতেমা বেগম নামে আরেক অভিভাবক। তিনি বলেন, তার দুই ছেলে জিলা স্কুলে পড়াশোনা করে। একজন ৮ম শ্রেণিতে আরেকজন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। অন্যান্য দিন তারা দুই ভাই এক সাথে স্কুলে আসে আবার ছুটি শেষে ফিরে যায়। কিন্তু আজ আমি সাথে না এসে পারলাম না। বাধ্য হয়ে স্কুলের বাইরে অপেক্ষায় আছি। না জানি কখন অসুস্থ হয়ে পড়ে সে শঙ্কায় আছি।
এ বিষয়ে জিলা স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক ও যশোর জেলা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, গরমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন থাকলেও প্রথম দিনে কোনো ঝুটঝামেলা ছাড়াই আমরা শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তবে সদর উপজেলার আমদাবাদ স্কুলের একজন তরুণ শিক্ষকের মৃত্যুর সংবাদে কিছুটা সময় শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিচলিত হয়ে পড়েন বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি আমরা বেশ গুরুত্ব দিয়েছি। বিশেষ করে সুপেয় পানি ও স্যালাইনের ব্যবস্থা রাখা হয়। তবে অভিভাবকরা আগেভাগেই এসব বিষয়ে সচেতন ছিলেন বলে তিনি জানান।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম ছিলো। মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলোতে গতানুগতিকভাবেই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর ৫০ ভাগ প্রথম অনুপস্থিত দেখা গেছে। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের আগের মত একই পদ্ধতিতে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে মোট ৬০ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ২৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬০ জনের মধ্যে ২৫ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ৬৯ জনের মধ্যে ২৬ জন উপস্থিত ছিলো।
এই স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ‘দীর্ঘদিন পর স্কুল খুললেও ক্লাসে গরম লাগছে। তার পরেও ক্লাস শুরু হওয়াতে আমরা খুশি।’ এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা সুলতানা লিপি বলেন, স্কুল খোলার প্রথম দিন বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করলে তাদের বাইরে আর যেতে দিচ্ছি না। বাইরের খাবারও খেতে দিচ্ছি না। টিউওবয়েল থেকে ঠা-া পানি পান করানো হচ্ছে। মূলত একশ্রেণির অভিভাবক তাপদাহের আতঙ্কে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না বলে তিনি জানান।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজুল হোসেন বলেন, যশোর সদর উপজেলার আমদাবাদ স্কুলের একজন সহকারী শিক্ষকের মৃত্যুকে ঘিরে অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি ছিলো। তবে তিনি স্কুলে মারা যাননি, এমনকি হিটস্ট্রোকে মারা গেছেন সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। তবে তার মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। তিনি বলেন, এই দুঃখজনক খবর ছাড়া জেলার সার্বিক পরিস্থিতি ভালো। কোথাও কোনো শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আশা করি সামনের দিনগুলোও ভালোভাবে কেটে যাবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।