এইচএসসি পাস না হলে সভাপতি হওয়া যাবে না, দুবারের বেশি নয়

রানা মাহমুদঃ-নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে হলে কমপক্ষে এইচএসসি বা সমমানের (উচ্চমাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তা না হলে কেউ সভাপতি নির্বাচিত হতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো ব্যক্তি একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরপর দুবারের বেশি সভাপতি, শিক্ষক প্রতিনিধি বা অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে পুনরায় নির্বাচন করার সুযোগ পাবেন।

এসব বিধান রেখে নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা সংশোধন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন কয়েক দিন আগে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছিল।

জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সমন্বয় কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আগের প্রবিধান মালায় কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ছিল। সে জন্যই সেটিকে সংশোধন করে নতুন প্রবিধানমালা করা হয়েছে। এটি এখন কার্যকর।

এত দিন ২০০৯ সালের প্রবিধানমালা দিয়ে চলছিল বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি। এখন সেটি রহিত হয়ে গেল। এত দিন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ ছিল না। ফলে যে কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতে পারতেন। একসময় স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাঁদের চাওয়া অনুযায়ী নিজ এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি হতেন। কিন্তু ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতের রায়ের পর সংসদ সদস্যরা পদাধিকারবলে সভাপতি হতে পারেন না। যদিও বাস্তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পছন্দের ব্যক্তিরাই পরিচালনা কমিটির সভাপতি হয়ে থাকেন। সাধারণত স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আত্মীয়স্বজন, ঘনিষ্ঠজন, অনুসারী বা দলীয় নেতা-কর্মীরা পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন পদে বসছেন।

অভিযোগ আছে, অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার মানোন্নয়নের চেয়ে নিয়োগ, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ যেসব কাজে আর্থিকভাবে লাভ হওয়ার সুযোগ আছে, সেগুলো নিয়েই বেশি আগ্রহী পরিচালনা কমিটিগুলো। অনেকের বিরুদ্ধে প্রায়ই নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ না করায় যে কেউ সভাপতি হয়ে শিক্ষকদের ওপর ‘খবরদারি’ করতেন বলে অভিযোগ আছে।

এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই সভাপতির শিক্ষাগত ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রি করা হয়। নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক করা নিয়ে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দেশে বর্তমানে মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ৩৫ হাজারের বেশি। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে। এর মধ্যে কলেজ পর্যায়ের পরিচালনা কমিটিকে বলা হয় গভর্নিং বডি এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিকে বলা হয় ম্যানেজিং কমিটি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য তহবিল সংগ্রহ, শিক্ষক নিয়োগ (বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ বা এনটিআরসিএর সুপারিশে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হয়, তবে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পুরো ক্ষমতা কমিটির হাতে), বরখাস্ত, বাতিল বা অপসারণ, নৈমিত্তিক ছুটি মঞ্জুর করা ইত্যাদি পরিচালনার কাজ কমিটির হাতে। উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত বাজেটসহ বার্ষিক বাজেট অনুমোদন, সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, সংরক্ষিত ও সাধারণ তহবিল, অন্যান্য তহবিল, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বিলে সই করাসহ মোটামুটি প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ কাজই হয় পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে।

সংশোধিত প্রবিধানমালা অনুযায়ী, পরিচালনা কমিটির মেয়াদ হবে প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন থেকে পরবর্তী দুই বছর। কোনো শিক্ষক যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, সেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে পারবেন না। তবে সমপর্যায়ের বা নিম্নস্তরের অন্য কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে নির্বাচিত হতে বাধা নেই।

গভর্নিং বডির সভাপতি মনোনয়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলার সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির কর্মচারী, শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি বা স্থানীয় খ্যাতিমান সমাজসেবকদের মধ্যে থেকে তিনজন ব্যক্তির নাম ও জীবনবৃত্তান্ত সংবলিত প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কাছে পাঠাবে। তারপর শিক্ষা বোর্ড প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে একজনকে সভাপতি মনোনয়ন করবে। তবে সভাপতি পদে প্রস্তাবিত ব্যক্তিদের নামের তালিকাক্রম মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বলে গণ্য হবে না।

অন্যদিকে ম্যানেজিং কমিটির বিভিন্ন শ্রেণির সদস্যপদের নির্বাচন হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অনধিক সাত দিনের মধ্যে সভাপতি নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকবেন। ওই সভায় নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে তাদের মধ্যে থেকে অথবা স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি, খ্যাতিমান সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধি অথবা কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে একজনকে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হবে। এটিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন লাগবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *